শিশুর এডিনয়েড এর কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার কি

শিশুর এডিনয়েড এর কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার কি সেইসাথে শিশুর এডিনয়েড হওয়ার বয়সসীমা কত? এডিনয়েড কাকে বলে? কিভাবে তা প্রতিকার বা প্রতিরোধ করা যায়, কীভাবে বা কী দেখলে বুঝা যায় শিশুর এডিনয়েড আছে? ইত্যাদি বিষয়ে জানতে নীচের লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
শিশুর-এডিনয়েড-এর-কারণ-লক্ষণ-ও-প্রতিকার-কি
মৌসুমজনিত পরিবর্তন এবং বিভিন্ন পরিবেশগত ও অন্যান্য কারণে শিশুদের নানাবিধ শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে, তবে তা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

পেজ সূচিপত্রঃ শিশুর এডিনয়েড এর কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার কি

শিশুর এডিনয়েড এর কারণ
শিশুর এডিনয়েড এর লক্ষণ
এডিনয়েড আসলে কাকে বলে?
শিশুর এডিনয়েড হওয়ার বয়সীমা কত?
এডিনয়েডের প্রতিকার বা প্রতিরোধ কিভাবে করা যায়
শিশুর এডিনয়েড আছে কীভাবে বুঝবেন বা কী দেখলে বুঝা যায় শিশুর এডিনয়েড আছে?
এডিনয়েডের সমস্যা ও চিকিৎসা পদ্ধতি
এ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
শেষ কথা

শিশুর এডিনয়েড এর কারণঃ

মূলত একটি শিশুর যদি বারবার ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণগুলি (যেমন-ঠান্ডা লাগা, ফ্লু, গলা ব্যথা, ব্রঙ্কাইটিস) ইত্যাদি হতে থাকলে তা এডিনয়েড বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। এ ছাড়াও মৌসুমীজনিত অ্যালার্জি, পরিবেশগত ধোয়া ও দূষণ, শিশুর বংশগত কারণ, আবার অনেক সময় পেটের অ্যাসিড গলার মধ্যে উঠে এলে তা এডিনয়েডের টিস্যুতে জ্বালাতন করে থাকে। অর্থাৎ উপরোক্ত কারণগুলিই আসলে একটি শিশুর এডিনয়েডের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

শিশুর এডিনয়েড এর লক্ষণঃ

শিশুর এডিনয়েড আছে কীভাবে বুঝবেন এ সম্পর্কে জানতে হলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি লক্ষ্য রাখতে হবে, যেমন-
  • শিশুটি মুখ হাঁ করে ঘুমায়, অর্থাৎ এটি যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে, তাহলে ধরে নেয়া যেতে পারে যে, এটিও একটি এডিনয়েড এর অন্যতম লক্ষণ।
  • অনেক শিশুই ঘুমের মধ্যে শব্দ বা নাক ডাকে। আবার হঠাৎ দম বন্ধ হয়ে ঘুম থেকে উঠেও যেতে পারে। অর্থাৎ এই ধরণের বিষয়গুলি দীর্ঘায়িত হওয়ার ফলে এটিও একটি এডিনয়েডের লক্ষণ হতে পারে।
  • ঘন ঘন সর্দি-কাশিতে ভোগে, যা সহজে সারতে চায় না। এরকম বিষয়গুলি যদি দীর্ঘদিন ধরে ঘটতে থাকে, তাহলে এটিও একটি এডিনয়েডের কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
  • লসিকাগ্রন্থি বড় হয়ে নাকের মাংস বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ শিশুরা স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারে না। অর্থাৎ এটিও একটি এডিনয়েডের লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনঃ শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকসমূহ

  • ঘন ঘন কানে ব্যথা, ইনফেকশন, পর্দা ফেটে যাওয়া, কানে পানি জমা, কানে কম শোনা ইত্যাদি বিষয়গুলি যদি চলমান বা অনেকদিন ধরে ঘটতে থাকে, তাহলে এটি শিশুদের একটি এডিনয়েডজনিত লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
  • ঘন ঘন গলার ইনফেকশন হয়, খুসখুসে কাশির পাশাপাশি গলার স্বর বসে যায়। অর্থাৎ শিশুটির এই সমস্যা যদি দীর্ঘদিন ধরে চলে তাহলে ধরে নেয়া যেতে পারে, শিশুটির এডিনয়েডজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে।
  • দেহে অক্সিজেনের স্বল্পতার জন্য ঘুম ঘুম ভাব হয়, পড়ালেখা ও স্কুলে শিশুর অমনযোগিতা, বুদ্ধিমত্তা কমে যাওয়া ছাড়াও কারো কারো রাতে বিছানায় প্রস্রাবও করতে দেখা যায়।

এডিনয়েড আসলে কাকে বলে?

মূলত এডিনয়েড কাকে বলে, তা ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে, এডিনয়েড হলো এক ধরণের লিম্ফয়েড টিস্যু বা লসিকা গ্রন্থি। যেটি সব শিশুদের মধ্যেই থাকে। অর্থাৎ প্রত্যেক শিশুই এডিনয়েড নিয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে। আসলে আমাদের নাকের একদম পেছনে নাক ও গলার সংযোগ স্থলে এডিনয়েড নামক একটি লসিকা গ্রন্থি থাকে। এটি গঠনগত দিক থেকে টনসিলের মতো দেখতে। প্রকৃতপক্ষে এই এডিনয়েড কিন্তু বাইরে থেকে দেখা যায় না। কারণ আমাদের শরীরের নরম তালুর ওপরে এডিনয়েড থাকে। তাই এটি খালি চোখে দেখবার কোন সুযোগই থাকেনা। এডিনয়েড দেখতে হলে এক্স-রে করতে হয়। অবশ্য এখন উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থায় বা বিশেষ ধরণের এন্ডোস্কোপ দিয়ে এডিনয়েড সরাসরি দেখা যেতে পারে।

শিশুর এডিনয়েড হওয়ার বয়সসীমা কত?

শিশুর এডিনয়েড কী ও কেন হয় বলতে প্রত্যেক শিশুই কিন্তু এডিনয়েড নিয়েই জন্মগ্রহণ করে থাকে। তবে সাধারণত ২ বছর থেকে ৭ বছর পর্যন্ত এডিনয়েড ধীরে ধীরে একটু একটু করে বড় হয়। আবার ৭ বছর থেকে ৯ বছর পর্যন্ত এডিনয়েড ধীরে ধীরে সর্বোচ্চ আকৃতিতে পৌঁছে এবং ৯ বছর বয়স থেকে এডিনয়েড ছোট হতে থাকে ও তা স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে। উল্লেখ্য যে, ১২ থেকে ১৩ বছর পর্যন্তও অনেকের এডিনয়েড থাকে, তবে সেটি সংখ্যায় খুবই নগণ্য।

এডিনয়েডের প্রতিকার বা প্রতিরোধ কিভাবে করা যায়ঃ

শিশুর এডিনয়েডের সমস্যা হলে সঠিক যত্নের মাধ্যমে এডিনয়েড ইনফেকশনের হার কমানো সম্ভব। শিশু যাতে ধুলোবালি, স্যাঁতসেঁতে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুকে আইসক্রিম বা ঠান্ডা জাতীয় খাবার না খাওয়ানো, শিশুর যাতে ঠান্ডা না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখা। এক্ষেত্রে যদি নাক দিয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তাদের স্টেরয়েড স্প্রে, নাকের ডিকনজেস্টেন্ট ড্রপ (সাময়িক) ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে, সর্বোপরি সর্দি-কাশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা।
এছাড়াও ঘুমানোর সময় একটু উঁচু বালিশে শিশুকে ঘুমাতে দিতে হবে। শিশুর শীতের পোশাক নিশ্চিত করতে হবে। বয়স অনুযায়ী শিশুদের সঠিক ওজন বজায় রাখার বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। শিশুদের স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে দিতে হবে। সেইসাথে পর্যাপ্ত ঘুম, প্রচুর পানি পান নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে শীতের রাতে এবং সকালে বাইরে বের হলে কানটুপি ব্যবহারে অভ্যস্ত করতে হবে।

শিশুর এডিনয়েড আছে কীভাবে বুঝবেন বা কী দেখলে বুঝা যায় শিশুর এডিনয়েড আছে?

শিশুর এডিনয়েড গ্রন্থি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হলে তাদের চেহারায় এক ধরণের পরিবর্তন বা ছাপ পরিলক্ষিত হয়। যাকে এডিনয়েড ফেসিস বলে। এ ছাড়াও শিশুটি মুখ হাঁ করে নিশ্বাস নেবে কোনমতেই নাক দিয়ে নিশ্বাস নিতে পারবেনা। অর্থাৎ যদি দীর্ঘদিন এভাবে হাঁ করে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার কারণে শিশুটির সামনের পাটির দাঁত স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু থাকবে। মাড়ি নরম হয়ে যাবে। মুখ দিয়ে লালা পড়বে। এ ছাড়াও দীর্ঘদিন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ার কারণে নাকের ছিদ্রগুলো ছোট হয়ে পড়বে। মুখের ভেতর বিষন্ন ভাব চলে আসবে এবং শিশুটিকে ভাবলেশহীন দেখাবে। সুতরাং একটি শিশুর মুখ মন্ডলের এই ধীর পরিবর্তনকে এডিনয়েড ফেসিস বলা হয়। অর্থাৎ ‍উপরোক্ত কারণগুলির জন্যই ধরে নেয়া যেতে পারে যে শিশুটি এডিনয়েড দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।

এডিনয়েডের সমস্যা ও চিকিৎসা পদ্ধতিঃ

শিশুর এডিনয়েডের সমস্যা তৈরি হলে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় শ্রবণশক্তিও পরীক্ষা করতে হতে পারে। ওষুধ হিসেবে অ্যান্টিহিস্টামিন, মন্টিলুকাস্ট, নাকের স্প্রে/ড্রপ এবং কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ সর্দিজ্বর হলে কি করণীয় - কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়

শিশুর এডিনয়েডের সমস্যা হলে অনেক সময় ওষুধের মাধ্যমে নিরাময় না হতেও পারে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাহায্যে অস্ত্রোপচার করা উচিত। এডিনয়েড অপারেশনের জন্য খুব বেশিদিন হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন হয় না। মাত্র একটি রাত থাকলেই হয়। পাশাপাশি কানে শোনার পরীক্ষাও করে নিতে হবে। এডিনয়েড এর কারণে কানে পানি জমলে বা শুনানি কমে গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলীঃ

  • এডিনয়েড অপারেশন বয়স
  • এডিনয়েডের সমস্যা
  • এডিনয়েড এর কারণ
  • এডিনয়েড এর লক্ষণ
  • এডিনয়েড এর ঔষধ
  • এডিনয়েড এর প্রতিকার
  • এডিনয়েড থেকে জটিলতা
  • এডিনয়েড কেন হয়
  • শিশুর এডিনয়েড হওয়ার বয়সীমা কত?
  • শিশুর এডিনয়েড আছে কীভাবে বুঝবেন
  • এডিনয়েড আসলে কাকে বলে?
  • শিশুর এডিনয়েডের সমস্যা
  • কী দেখলে বুঝা যায় শিশুর এডিনয়েড আছে?

শিশুর এডিনয়েড এর কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার কি - শেষ কথাঃ

শিশুর এডিনয়েড এর কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার কি ইত্যাদি সম্পর্কে যদি জেনে থাকেন তাহলে  আশা করি আপনাদের তা উপকারে আসবে। আসলে শিশুরা তাদের সমস্যাগুলো বলতে পারেনা। যার কারণে একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত শিশুদের ফলোআপ বা দেখাশোনার মধ্যে রাখতে হয়। অনেক আকুলতা, বিকুলতা আর অপেক্ষার পর শুরু হয় সামাজিক কাঠামোয় বাধা একান্ত নিজস্ব পরিবার, অর্থাৎ ঘর-সংসার। আর এই সংসার বা পরিবারে আসে ফুটফুটে সন্তান। কিন্তু এই সন্তান যদি সুস্থ্য না থাকে বা অসুস্থ্য থাকে, তাহলে তার সম্পূর্ণ দায়ভার বা দোষ পড়ে শিশুর পিতা-মাতা এবং বিশেষ করে মায়ের উপর। তাই একটি শিশুর সবচেয়ে কাছের মানুষ হিসেবে তার মাকেই সম্পূর্ণ বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হয়।

আরও পড়ুনঃ বাচ্চাদের জিহ্বা কিভাবে পরিষ্কার করবেন

যাইহোক, আজকের আর্টিকেলে শিশুর এডিনয়েড এর কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার কি বিষয়ে আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। মূলত খেয়াল রাখতে হবে যে কোন সমস্যা বা অসুস্থতা দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা যাবে না। অনেকেই আছেন, যেমন-শিশুর নাক দিয়ে সর্দি পড়ছে বা সবসময় সর্দি পড়ছে, এমন বিষয়গুলিকে তারা ব্যাখ্যা করেন এভাবে যে, শিশুটি সারাদিন পানি নিয়ে খেলা করে তাই তার সর্দি হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি এমন নয়, কারণ এক্ষেত্রে শিশুটির একজন পিতা-মাতা হওয়ার কারণে আপনাকে তা সংশোধন বা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। সুতরাং আমাদের সামাজিক জীবনে এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলো অনেকেই খুব হালকা ভাবে গ্রহণ করে, কিন্তু পরবর্তীতে এগুলোর মাশুল কিন্তু বড় আকারে দিতে হয়ে থাকে। সুতরাং শিশুর এডিনয়েড এর কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার কি বিষয়ক আলোচনাটি যদি আপনার নিকট গ্রহণযোগ্য বা ভালো লাগে তাহলে তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। সবশেষে আজকের আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতি এবং সম্পৃক্ত থাকার কারণে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।